বিডি টপ টেন

বিডি টপ টেন

আজকের দিন-তারিখ-সময়
আজ ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার | ভোর ৫:৩৬
  • হোম
  • ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস
  • অফার
  • জোকস
  • স্বাস্থ্য টিপস
  • তারকা সংবাদ
  • ধর্ম
    • ইসলাম
  • জনসচেতনতা
  • নব দিগন্ত
  • জানা অজানা
  • সংগৃহীত

আমার আয়না ঘর দর্শন

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫ by BD TOP TEN Leave a Comment (Edit)

সম্ভবত আয়না ঘর ভিজিট করা youngest সাংবাদিক আমি। এটা অত্যন্ত ট্রমাটিক ছিল, কিছু লেখার ভাষা পাচ্ছিলাম না। অন্যদিকে বাংলা টাইপ করাটা আমার জন্য একটা মহা ঝামেলা। যাইহোক, আমি কয়েকটি FAQ করব এবং কিছু পর্যবেক্ষণ বলব, যেগুলো হয়তো আপনি এখনো জানেন না বা মিডিয়ায় আসেনি।

১. ওয়ালে কীভাবে লেখা হতো?
উত্তর: প্রধানত মাছের কাঁটা। খাইতে দিলে সেগুলো জমিয়ে রাখতেন। এ ছাড়া কোনো ধারালো কণা বা কিছু পেলে। অনেককেই লেখার জন্য কলম ও কাগজ দেওয়া হতো, তারা সেই কলম ব্যবহার করেছে।

২. আয়না ঘর দেখাতে এতদিন লাগল কেন?
উত্তর: ডিজিএফআই বা স্পেসিফিক্যালি আর্মি আসলে কোনো দিনই এটা দেখাতে চায়নি, কারণ এটা তাদের ইমেজের জন্য হুমকি। কিন্তু নেত্র নিউজ এটার জন্য কাজ করে গেছে। গত বুধবারে আমাদের রিপোর্ট করা হয়েছিল যে আর্মি আয়না ঘর ভিজিট দিচ্ছেন না; এর পরের দিন সরকার আয়না ঘর ভিজিটের কথা জানান। আর্মি দোষী, তাই অবশ্যই তারা চায়নি তাদের পাপ সামনে আসুক। কিন্তু মিডিয়ার চাপে তা করতে বাধ্য হয়েছে।

৩. রিভলভিং চেয়ার নাকি কী?
উত্তর: এটাকে প্রথমে অনেকেই ইলেকট্রিক শক চেয়ার ভেবে ভুল করেছেন। মূলত এটাতে হাত-পা মাথায় বেঁধে জোরে ঘুরানো হয়। আর এটা ইলেকট্রিক, তার প্রমাণ আছে—এটার সাথে লাগানো তারের লেজ ছিল। মানে তার কেটে ফেলার পরেও কিছু তার রয়ে গেছে। যেহেতু অনেকেই রিভলভিং চেয়ার শাস্তির সাথে পরিচিত না, তাই এটাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার চেয়ার ভেবেছেন। এটা নরমাল।

৪. একটি মাত্র চেয়ার কেন?
উত্তর: এত মানুষকে একটা চেয়ারে কীভাবে শাস্তি দিতো? প্রথমত ডিজিএফআই অনেক আলামত নষ্ট করে ফেলেছে। গুম কমিশন এই চেয়ারটাও অনেক কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছে। এটাও লুকানো হয়েছিল। আর সবাইকে একই শাস্তি দিতো না। অনেক রকম সাজার ব্যবস্থা ছিল। যেমন এই রুমে ঝুলিয়ে মারার মতো ব্যবস্থা ছিল, যা পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

৫. তাসনিম খালিলের ছবিতে করোনা আইসোলেশন সেন্টার লেখা কেন?
উত্তর: ছবিটি আমিই তুলেছি এবং লেভেলটা ইচ্ছে করেই ফ্রেমে রাখা হয়েচজে। আইসোলেশন সেন্টার আসলে একটা ভ্রম। এর ভিতরেই রাখা হতো বন্দীদের। আর এই কল্যাপসিবল গেটের কথা একাধিক সারভাইভার আমাদের বলেছেন।

৬. এতদিন শুনে আসলাম আয়না ঘর হল অনেক ছোট রুম, আলো-বাতাস অসহ্য। এখন দেখি অনেক রঙ করা, আলো ভরা—এগুলো কেন?
উত্তর: যতগুলো গোপন বন্দিশালা আছে (ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারসহ), সবগুলাতে আলাদা মাপের রুম আছে। কোথাও রুমের ভিতরেই টয়লেট, কোথাও কয়েকটি সেলের জন্য বাইরে শেয়ার্ড টয়লেট। আর সেখানে সব টয়লেটের দরজায় ফুটো করা থাকত, যেন বন্দী টয়লেটে গিয়ে কী করছে দেখা যায়। একদম ছোট—৩ হাত যায় এমন রুমও আছে। আল্লাহ জানেন এগুলোর ভিতরে মানুষ কীভাবে বেঁচেছে! আবার একদম অন্ধকার, চারপাশ কালো ওয়াল, ছাদও কালো রঙ করা এমন রুম আছে। আমি যেটা ক্যামেরায় ঠিকমতো আনতে পারিনি আলোর অভাবে। কিছু রুম তুলনামূলক ভালো ছিল, সেগুলোকে ভিআইপি রুম বলা যায়।

৭. একটি লাল তোয়ালে কীভাবে এলো? উত্তর: লাল তোয়ালেটা আমার চোখে পড়েনি। তবে র্যাব-২-এ এখন নতুন করে যারা কাজ করতে আসছেন, তাদের অনেক সেনা সদস্যের ট্রাঙ্ক, জিনিসপত্র আছে। হতে পারে তাদের কেউ এটা রেখেছে।

এবার আমার কিছু শকিং পর্যবেক্ষণ:

  1. প্রথমত ওয়াশরুমের দরজায় ফুটো করা। দ্বিতীয়ত, ওয়াশরুমগুলো এত ছোট যে কমোডগুলো সোজা বসানো যায় না—ডায়াগোনালি বসাতে হয়েছে! আমি জানি না ওরা এখানে কীভাবে বসতেন। নিশ্চয় অর্ধেক বসেই কাজ সারতে হতো! তার ওপর ফুটো দিয়ে গার্ড এসে দেখবে! ভাবা যায়! সারভাইভারদের মুখে শোনা কিছু কোথাও কোথাক ওয়াশরুমেও সিসি ক্যামেরা লাগানো।
  2. যতটা সম্ভব এটাকে ট্রান্সফর্ম করার চেষ্টা হয়েছে। অনেক জায়গায় ওয়াল রং করা হয়েছে, লেখা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অনেক জায়গায় নতুন ওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। গুম কমিশন অনেক কষ্ট করে এসব খুঁজে বের করেছে। ডিজিএফআইয়ের আয়না ঘর ের দুপাশের ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে, যার কারণে রুমগুলোতে এখন অনেক আলো। রুমের সামনে এই ওয়ালগুলো থাকলে নিশ্চিত এখানে একটা ভৌতিক পরিবেশ হতো! এমনকি র্যাব-১-এর একটা ওয়াল না ভাঙলে গুম কমিশন সবচেয়ে ছোট খুপরির মতো রুম খুঁজে পেত না। অথচ কেউ ভাবেনি এর ভিতরে রুম থাকা সম্ভব!
  3. স্কুইড গেম সিরিজ হয়তো দেখেছেন, যেখানে গার্ডদের আইডেন্টিটি যেন না বোঝা যায়—তারা একই জামাকাপড়-মুখোশ পরে থাকে। এখানেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যেমন এক গার্ড আরেক গার্ডকে শিস দিয়ে ডাকত, নাম ধরে ডাকত না। বন্দীদের সাথে ফিসফিস করে কথা বলত, যাতে তাদের আসল ভয়েস শোনা না যায়।
  4. আরমানকে যে রুমে ৮ বছর রাখা হয়েছিল, তার সামনে সাদা টাইলস ছিল। ওরা টাইলস চেঞ্জ করার চেষ্টা করছে। টাইলসগুলো ফ্লোর থেকে তুলে একটা সেলের মধ্যে ঢুকিয়ে, সেলের সামনে আরেকটা ওয়াল তুলে রং করে দিয়েছে। আবার সেলের ভিতরে ছোট একটা ওয়াশরুম—তার সামনেও আলাদা ওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে।
  5. জঙ্গি নাটক বানানোর জন্য ওদের স্টকে অনেক ইসলামিক বই আছে। যেগুলোর একটা স্ট্যাক পাওয়া গেছে।
  6. আমি প্রিজন ব্রেক মুভি পছন্দ করি—শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন, এস্কেপ প্ল্যান, প্রিজন ব্রেক—এমন অনেক সিরিজ দেখেছি। সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকে মনে হয়, আয়না ঘর থেকে পালানোর কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
  7. উপদেষ্টা আসিফ ও নাহিদ তাদের সেলগুলো চিনতে পারে। আসিফ প্রথমে চিনলেও একটু কনফিউজ ছিল, তারপর আমরা যখন ওকে ওয়াশরুম দেখাই, সে ওয়াশরুম ও ওয়াশরুমের আয়না, বেসিন এগুলো দেখে চিনতে পারে যে এটাই সেই রুম। একই বিল্ডিংয়ে নাহিদও তাকে যে রুমে রাখা হয়েছিল, সেই রুম খুঁজে পায়। তবে রুমগুলাতে কিছু মডিফিকেশন করা হয়েছে, ভিন্ন দরজা লাগানো হয়েছে, এক্সস্ট ফ্যান খুলে ফেলা হয়েছে, অনেক জায়গায় দুটি রুম ভেঙে একটি রুম বানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের এই ট্রমা কাটানোর জন্য একটি ক্লোজার দরকার ছিল।যেটা তারা পেয়েছে।
  8. তাসনিম খালিল একজন ব্রিলিয়ান্ট সাংবাদিক।
  9. এটি মেনে নেওয়া কঠিন! মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে দেখেছি—কালো দেয়ালে লেখা আছে মানুষের ফোন নম্বর, কাকুতি-মিনতি, ঠিকানা, বন্দিদের জন্য মেসেজ! ভাবাই যায় না, একজন মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই বন্দিশালায় কাটিয়েছেন! প্রতিদিন ঘুম ভাঙতেন একটা হোপলেস পৃথিবীতে! ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুভয়! এভাবে কি বেঁছে থাকা যায়?

এ মুহূর্তে আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। রাত তিনটা বেজে গেছে, ঘুমাতে পারছি না। ভাবতে ভাবতে… মানুষ মানুষের সাথে কীভাবে এত নিষ্ঠুর হতে পারে?

Naimul Islam Miraz
Staff Correspondent at Netra News

Related Images:

BD TOP TEN

Filed Under: জনসচেতনতা, জানা অজানা, জেনে নিন, নব দিগন্ত, মগজ ধোলাই, সংগৃহীত, স্টাটাস - Status

কিছু নির্মম ইতিহাস – Tasrif Khan

আগস্ট ১৭, ২০২৪ by BD TOP TEN Leave a Comment (Edit)

২৩ জুলাই রাত রাত ১ টার কথা বলছি। একজন সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সার কল দিয়ে বললো, “তাসরিফ, তোর বাসার নিচে নাম, চা খাইতে আসতেছি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে”।

৫ জুলাই থেকে ছাত্রদের পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট করা, কবিতা লিখতে থাকা এবং ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ গান টা ফেসবুকে চলতে থাকায় সরকারি গুন্ডা বাহিনীর থ্রেটে আমি তখন বাসার বাইরে অবস্থান করছিলাম। ওই সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সারের কথায় বিশ্বাস করে, আমি তখন বাসার সামনে আসি উনার সাথে দেখা করতে। গাড়ি থেকে ৬-৭ জনের মত নেমে আসে। ইনফ্লুয়েন্সার সাহেব আমাকে একটু সাইডে নিয়ে আস্তে করে বুঝিয়ে বলে, “সাথে যারা আছে তারা একটা এজেন্সির লোক এবং আইন প্রয়োগ সংস্থার বাহিনীর কয়েকজনও আছে এখানে”। আমি তখন উনার কাছে জানতে চাই যে উনারা কেন এসেছেন কি চাচ্ছেন মূলত!

উনি তখন বুঝায় বলে, “সরকারি একটা কাজ আছে, এই সরকার আরও ৭-৮ বছর ক্ষমতায় থাকবো। আমরা ঠিকমত বাঁচতে চাইলে সরকারের পক্ষে কাজ করতে হইবো, এর বাইরে কোন রাস্তা নাই।” এই কথা বলে উনি আবার আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সেই ৬-৭ জনের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলে, “তাসরিফ, তোমাকে আমরা চিনি। আমরা তোমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিতেছি, ছোট্ট একটা ভিডিও করতে হবে। এই ভিডিওটা আমাদের কালকের মধ্যে লাগবে। পরশু সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিওটা দেখবে এবং তারপর তুমি আপলোড করবা”।

সেই ইন্সুরেন্সার তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমাকে বলে, “দেখ তাসরিফ, পিএম এর চোখে পড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ, ভিডিওটা ভালো করে কর, সরকার যতদিন আছে সুবিধা পাবি”। কথা শেষ করার আগেই উনি পকেট থেকে এক লক্ষ টাকার তিনটা বান্ডেল, মোট তিন লক্ষ টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এইটা সামান্য ছোট একটা গিফট! টাকা যত চাস, তত দেয়া হবে, ভিডিওটা সুন্দর কইরা কর”।

ঠিক এই সময় আমার ফোনে আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তর নাম্বার থেকে একটা কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই শান্ত আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “তাসরিফ! পাঁচ ছয় জন পুলিশ এবং সিভিল ড্রেসের কয়েকজন মিলায়ে আমাকে রোল দিয়া সারা শরীরে মারছে!” শান্তর কথা শুনে আমার হাত-পা একরকম কাঁপতে থাকে। আমি বোঝার চেষ্টা করি, এই মাইর খাওয়াটা কি আমাকে এদিকে রাজি করানোর জন্য ভয় দেখানো? নাকি কেবলমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? শান্তর লাইন কেটে যায়।

আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয় দেওয়া তাদেরকে বলি, “ভাই, এইমাত্র কয়েকজন মিলে আমার ভাই, আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্ত কে প্রচুর মারছে!”। ওরা জাস্ট আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরেহ! দেশের যে অবস্থা, এটা এখন কিছু করা যাবে না। ওরে বলো বাসায় চলে যাইতে”।

আমার তখন মাথায় আসে, এখন যদি আমি ওদেরকে টাকা ফেরাই দেই অথবা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাই, তবে তারা আমাকে চাইলেই গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ভিডিও করে জোরপূর্বক আপলোড করাতে পারে। আমি তাই মাথা ঠান্ডা করে ওদেরকে বলি ঠিক আছে আমি দেখতেছি কি করতে পারি, কালকের মধ্যে জানাচ্ছি। ওরা আমাকে তখনও একরকম থ্রেট দিয়ে বলে, “ভাই জানাচ্ছির সুযোগ নাই! সিচুয়েশন তো বুঝেনই। ভিডিও কালকেই লাগবে”। সাথে ওই ইনফ্লুয়েন্সারও আমাকে বলে, “তাসরিফ, ভিডিওটা তো পিএম দেখবে সো বুইঝা শুইনা সুন্দর কইরা করিস”।

ওদের সাথে কথা শেষ করে আমি বাসায় ফেরত যাই। বাসায় সবাইকে সব সিচুয়েশন জানিয়ে আমি আমার ম্যানেজার আয়মান সাবিত কে ফোন দিয়ে বলি,”আয়মান, আমি বাসা ছেড়ে দিচ্ছি, এই এই ঘটনা ঘটছে। আমি তোকে নাম্বার দিচ্ছি, তুই ওই এজেন্সিকে আমার বাসা থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে ওদেরকে দিয়ে দিবি কালকেই। আমি আপাতত বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, কারণ আমি বাসায় থাকলে ওরা আমাকে তুলে নিয়ে যাবে”।

ওই সময় আমার মনের অবস্থা আমি জানি। আমার বাসার অবস্থা ডায়াবেটিসের রোগী আমার আম্মুর অবস্থা, আব্বুর টেনশন, গুম হয়ে যাওয়ার চিন্তা এবং দেশের সাথে বেইমানি করতে ওরা আমাকে বাধ্য করতে চাচ্ছে, সবকিছুই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সাথে বারবার আমার কানে বাজছে শান্তর ওই কান্না ভরা আর্তনাদ।

কষ্টের ব্যাপার কি জানেন? এই ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে শান্ত আমাকে ফোন দিয়ে বলছিল, “খান, আমার বাসায় আম্মা নাই। এদিকে কারফিউ চলছে, দুপুরবেলা খাওয়া হয় নাই, একটা দোকানও খোলা নাই আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে, কি করব?”। আমি শান্তকে বলছিলাম, “এক বড় ভাই ফোন দিছে, আমার বাসার সামনে যাওয়া লাগতেছে, তো তুমি আমার বাসায় চইলা আসো, দুই ভাই একসাথে খাবো”। ছেলেটা চাইছিল আমার বাসায় এসে ভাত খাইতে অথচ তাকে রাস্তায় বেধড়কভাবে মাইর খাইতে হইল। মার খাওয়ার পরে ফোনকলে ও আমাকে এটাও বলছিলো যে, “খান! সবাই আমারে একসাথে রোল দিয়ে মারতেছিলো আর একজন বন্দুক তাক করে চিল্লায়ে বলছিলো, চুপচাপ মাইর খা অমুকের পোলা নাইলে গুলি কইরা মাইরা ফালামু, লাশ খুঁজে পাইবো না তোর পরিবার!”

শান্ত এই কথাটা বলতে বলতে কাঁদতেছিল যে, “আমাকে ছাত্র বইলা বইলা ওরা মারছে আর বারবার বলতেছিল যে এই অমুকের পোলা ছাত্র! ওরে মার!”

ওই রাতে আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই।

আমি জানি কয়েকটা পোস্ট, কবিতা লেখা আর ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ এর মত কিছু গান করা ছাড়া দেশের জন্য তেমন কিছুই করতে পারি নাই। আমি জানি, আমি আবু সাঈদের মত পথে যেয়ে বুক পেতে দিতে পারি নাই। হয়তোবা এতটুকু সাহস আমার তখন হয় নাই। তবে, আল্লাহ জানেন আর আমি জানি, আমি টাকার কাছে বিক্রি হয় নাই আর দেশের সাথে বেইমানি করি নাই।

এই পোস্ট, পোস্টে শান্তর ছবিগুলা এবং ওদের নির্মমতার কথাগুলা আমি লিখে পোস্ট করছি এই কারণে, যেন ভবিষ্যতে কখনো এই স্বৈরাচারের প্রতি আমার ঘৃণা এতটুকু পরিমাণও কমে না যায়।

Tasrif Khan – কিছু নির্মম ইতিহাস টাইমলাইনে থাকুক। ২৩ জুলাই রাত রাত… | Facebook

 

Related Images:

BD TOP TEN

Filed Under: জনসচেতনতা, জানা অজানা, নব দিগন্ত, মগজ ধোলাই, সংগৃহীত Tagged With: ইনফ্লুয়েন্সার, কোটা আন্দোলন, ছাত্র, তাসরিফ, তৌহিদ আফ্রিদি, রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম, সোলাইমান শকুন

কেউ সুখে না রাখলে কি সুখি হওয়া যায়?

আগস্ট ১৫, ২০২৪ by Shahana Akhter Leave a Comment (Edit)

সুখে রাখো, সুখে থাকো, সুখে থাকার চেষ্টা।

আসছে…

Related Images:

Shahana Akhter
www.bn.bdtopten.com/author/shahanaa/

Filed Under: জনসচেতনতা, জানা অজানা, নব দিগন্ত, মগজ ধোলাই, সংগৃহীত, সুখি পরিবার

Sarjis Alam ভাইয়ের ২০২১ সালের পোস্ট

আগস্ট ১২, ২০২৪ by Rifat Chowdhury Leave a Comment (Edit)

২০১২ সালের কথা ৷ তখন ক্লাস নাইনে পড়ি ৷
ঘড়িতে সম্ভবত রাত ৯টার আশেপাশে !

আমি পড়ার টেবিলে ঝিমাচ্ছি ! মাঝে মাঝে চোখ বড় করে বইয়ের লেখাগুলা পড়ার চেষ্টা করছি ৷ আমার এই অবস্থা দেখে প্রতিদিনের মতো আম্মা বকাবকি করলো ৷ একটু পর এসে প্লেটে রাতের খাবার দিয়ে গেলো, যেন না খেয়ে ঘুমিয়ে না পড়ি ৷ আমি ওই অবস্থায় খাওয়া শুরু করলাম ৷ কিন্তু কখন যে খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছি সেটা মনে ছিল না ৷ ঘন্টা খানেক পরে আম্মা এসে দেখে – আমি টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি, আমার একহাত খাবারের প্লেটে, অর্ধেকের বেশি খাবার তখনও বাকি !
মানে আমি খেতে খেতেও ঘুমিয়ে পড়েছি !🤭

স্কুলে থাকতে এজন্য রেগুলার আম্মার বকা খাওয়া লাগতো ৷ আমি ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঘুমাতাম ৷ ঘুমাতে না দিলে টেবিলে ঝিমাতাম ৷ পড়ি আর না পড়ি, কালে ভাদ্রে যদি ১০ পর্যন্ত জেগে থাকতে পারতাম তাহলে আম্মা অনেক খুশি হতো !
২/১টা পরীক্ষার আগে ১১টা পর্যন্ত জাগতাম ! আর ১২টা পর্যন্ত কখনো জেগে থাকা হয়নি !😁

বিপরীতে আমি প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখতাম ৷ ৫টার পরে ঘুম থেকে উঠেছি এটা খুব কম হতো ৷ বেশিরভাগ সময় ৩টা, ৪টায় ঘুম থেকে উঠতাম ৷ টিচারদের পড়া একবার দেখে যেতাম ৷ আম্মা বলতো আমি কিভাবে পড়া দেই স্কুলে ! আমি তো জীবনে সন্ধ্যার পর ২ঘন্টা ঠিকমত পড়িনি !

আম্মার রুম আর আমার রুমের মাঝে দাদার রুম থাকায় সকালে দাদার রুম খুলে আমার রুমে আম্মার আসা হতো না, তাই সকাল বেলায় ২ঘন্টার জন্য আমার ম্যারাথন পড়াটা আম্মা বুঝতো না ৷ আর আমি নিঃশব্দে পড়া লোক ৷
আমার শিক্ষকবৃন্দ হয়তো খুব একটা বলতে পারবে না যে, আমি তাদের পড়া কখনো পারিনি ৷

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে হলে এসে গেস্টরুমেও ঘুমাতাম ! অনেক কষ্টে ১০টায় গেস্টরুমে যেতাম ৷ কখনো তার আগে একবার ঘুমিয়ে নিতাম ৷ বন্ধুরা ডেকে নিয়ে যেত ! বন্ধুরা না পারলে বড়ভাইরাও ডাকতো মাঝে মাঝে ৷
একদিন বন্ধুরা ৩বার ডাকার পরেও আমাকে নিয়ে যেতে পারেনি ৷ পরে আরিফ ভাই এসে ডেকে নিয়ে গেসে ! ওইদিন আরিফ ভাইয়ের উপর মেজাজ খুব গরম হয়েছিল ৷😄
মনে হচ্ছিলো এখনই হল ছেড়ে দিব !

গেস্টরুমে নরমালি সামনে থাকতাম তবে ১১টা পার হলে আমি আস্তে করে সবার পিছে চলে যেতাম ৷ দেয়ালে হেলান দিয়ে মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমিয়ে নিতাম !
আমার মনে আছে, থার্ড ইয়ারে থাকার সময় আমরা কয়েকজন যখন গেস্টরুম নিতে গেছি, তখন ১১টা পার হয়ে গেছে ৷ এতো ঘুম পাচ্ছিলো যে গেস্টরুম নিতে গিয়েও হালকা করে ঘুমিয়েছি !😅

গণরুমে চিল্লাচিল্লি, গান কিংবা ঢাক ঢোল বাজলেও আমি ঘুমিয়ে যেতে পারতাম ! সবার আগে ! একরুমে ৩৫জনের বেশি ঘুমানো যেত না ৷ জাহেদ, পল্লব, ফিরোজ, ফরহাদ এরা ঘুমাতে আসতো সবার শেষে ৷ ওরা জানতো আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠবো ৷ তাই জায়গা না থাকার কারনে ওরা ভোর ৪টা/৫টায় এসে আমাকে ডেকে দিত ৷আমি ঘুম থেকে উঠতাম আর ওরা একজন আমার জায়গায় ঘুমাতো !

এই অভ্যাসটা আমার একদম ছোটো বেলা থেকে ৷ যত ছোটো বেলার কথা আমি মনে করতে পারি, সেই সময় থেকে ৷ আম্মা ফজরের নামায পড়তে উঠতেন, আর নামায শেষে আম্মা রেগুলার কোরআন শরীফ পড়তেন, সেই শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যেত ৷ তারপর বাইরে বের হয়ে দেখতাম সূর্য উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে !🥰

তবে আমি ঘুম কাতুরে শুধু রাতে ! আমার ঘুমাতে ২ মিনিটও সময় লাগে না ৷ কয়দিন আগে রাত ৯টায় স্টুডেন্ট’কে অনলাইনে পড়াতে পড়াতে ঘুমায় পড়সি !

কখনো আমাকে ১২টার পর অনলাইনে দেখা গেছে মানে আমি অলরেডি একবার ঘুমিয়ে উঠেছি !
অথচ দিনে হাজার চেষ্টা করলেও আমার ঘুম আসবে না ৷

সেই অভ্যাস এখনো কাটাতে পারিনি ! ভার্সিটি শেষ হয়ে যাচ্ছে এখনও তেমনই আছি ৷ অবশ্য অভ্যাসটা কাটাতে
চাইও না ৷

অনেকে ইদানিং বিভিন্ন দরকারে রাত ১০টা/১১টার পর কল দেন ৷ ফোন রিভিস হয়না ৷ মনে করতে পারেন যে, ইচ্ছা করে রিসিভ করিনি ৷তাই গল্পটা বললাম ৷
এখনো আমার ঘুমের রুটিন এভারেজ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা !

Related Images:

Rifat Chowdhury

Filed Under: জনসচেতনতা, জেনে নিন, তারকা সংবাদ, মগজ ধোলাই, সংগৃহীত

আমার গুমের গল্প।ভিক্টিম: মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী!

আগস্ট ১১, ২০২৪ by Rifat Chowdhury Leave a Comment (Edit)

২০২০, ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে আমার গুম হওয়া এবং আমাকে নিয়ে জঙ্গি নাটক বানানোর কাহিনী ….

আমি মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী।
পেশা : FREELANCE PROCUREMENT AND SUPPLY CHAIN SPECIALIST .
এর আগে দুটো মাল্টিন্যাশনাল হোটেল চেইন
RADISSON BLU CHITTAGONG AND HOLIDAY IN DHAKA তে চাকরি করতাম।

পড়াশোনা Independent University of Bangladesh থেকে Electrical and Electrics engineering পাশ করি ২০১৩ সালে।

Hoilday in Dhaka City Center,
নতুন ওপেন হওয়া তেজগাতে একটি multinational hotel Chain এ Purchase Manager হিসবে জয়েন করার তৃতীয় মাস।

ক্যারিয়ারের চার বছরের মধ্যেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে Procurement Manager পদে সিক্স ডিজিট স্যালারিতে কর্মরত ছিলাম।

ক্যারিয়ার গ্রোথের পাশাপাশি আমার লিখালিখির একটা নেশা হয়ে যায়।
প্রথম দিখে রম্য টাইপ লিখা লিখলেও, পরে আমার লিখালিখির বিষয় হয়ে উঠে জুলুম অত্যাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

ভয় ডর না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখালিখির নেশা আমি কখনো ছাড়তে পারিনি শত ব্যাস্ততার মাঝেও!

২০২০ সাল,
মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে দেশ উত্তাল। তারই ধারাবাহিকতায়, ফেব্রুয়ারি এর শেষদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বিরোধী একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তাও দুই লাইনের।

তারই ফলাফল, ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আইনাঘরে যাত্রা …

সে যাত্রার এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা আজ আপনাদের জানাবো।

সকাল ৮- ৮.৩০ মিনিটে রিকশা নিয়ে অফিসে রওনা দিলাম বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার বাসা থেকে।

হাতিরঝিল পুলিশ প্লাজার সামনে আসার পর আমার রিকশা কে আটকে দেয় একটি সাদা মাইক্রো, সাথে সাথে নেমে আসে পাঁচ ছয় জন সাদা পোশাক পরা ব্যাক্তি।
আমাকে রিকশা থেকে নামিয়ে আমার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখিয়ে বলে আমার নাম মাসরুর কিনা, আমি বল্লাম ” হ্যাঁ ”

সাথে সাথে আমার দুই পাশে দুইজন হাত ধরে মাইক্রোতে উঠার জন্য বলে, আমি আতঙ্কিত হয়ে বলতে থাকি “ভাই আমার দুইটা ছোট ছোট সন্তান, আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ”

টিমের অফিসার তার RAB এর আইডিকার্ড দেখিয়ে বলেন, বুঝতেই তো পারছেন, আমরা কে?
গাড়িতে উঠেন এখুনি, নাইলে শুট করবো।

আমি ভয়ে উঠে পড়ি। পেছনের সিটে উঠিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলে, পেছনে হাত নিয়ে হাতকড়া পড়িয়ে দেয় সাথে সাথে।
পেছনে অস্ত্র সস্ত্র দেখে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম।

গাড়ি চলা শুরু করলো,
আমার মোবাইল নিয়ে ফেল্লো, আমার ফেসবুক এ ঢুকে, বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে কথা বলতে লাগলো, তাচ্ছিল্য সূরে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন স্যার?
অফিসার জবাব দিলো, তোমাকে তোমার অফিসে নিয়ে যাবো, জিজ্ঞাসাবাদ করবো কিছু। তারপরে ছেড়ে দেবো।

আমি আর কিছু বল্লাম না।

অফিসার বলা শুরু করলো “মাসরুর তুমি যদি আমরা যা জিজ্ঞাসা করি তার সত্য উত্তর দাও, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেবো। ”

এরপরে আমার সম্পর্কে, আমার পরিবার সম্পর্কে, ক্যারিয়ার নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলো আর আমি গাড়িতেই সব উত্তর দিতে থাকলাম।

এক ঘন্টা গাড়ি চলার পর দেখলাম গাড়ি থামলো। অফিসার ফোনে কথা বলছে নেমে, শুনতে পেলাম, তারা তিনশ ফিট আছে।
তা শুনে আমার বুক ধুক করে উঠলো,
কারণ তিনশ ফিটে অনেক ক্রস ফায়ার হয়েছে।

আমি শিওর হয়ে গেলাম তারা আমাকে ক্রস ফায়ার দেবে। কালেমা পড়ে নিলাম, দোয়া পড়তে লাগলাম।এবং জোড়ে জোড়ে দোয়া ইউনূস পড়তে লাগলাম।
সাথে সাথে চোখে ভেসে আসতে লাগলো আমার ছোট দুই সন্তানের ছবি, আমার মা বাবা, স্ত্রীর ছবি।

কিন্তু তারা আবারো গাড়ি চালানো শুরু করলো। পাশের একজন আমাকে বিভিন্ন আলেমের ওয়াজ শোনাতে লাগলো, মোবাইল দিয়ে। আর বলতে লাগলো, জিহাদি ওয়াজ লতো তোমার খুব প্রিয় তাই না?
তোমরা তো জঙ্গি হতে চাও তাই না?

আমি তখন রেগে গিয়ে বলি “ভাই এইসব আমাকে শোনাইতেসেন কেন? পারলে চোখ খুলে দেন!! এইরকম অমানবিকতা কেন করছেন? কি অপরাধ করেছি আমি? ”

তখন আমার ঘাড় চেপে ধরে বলে “চোপ শালা কথা বলবিনা একটাও ”
আমি চুপ মেরে যায়।

আর এক ঘন্টা চালানোর পর আমাকে নামানো হয় গাড়ি থেকে

ছোট একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
আমার চোখ আর হ্যান্ডকাপ খুলে দেয়া হয়।
সে রুমে তিন ফিট উচু দেয়াল দেয়া পার্টিশান টয়লেট। পাশে শোয়ার বিছানা। মানে টয়লেট আর বিছানা এক সাথে।

তখন শীতকাল ছিলো, গায়ে একটা জ্যাকেট ছিলো। আমি জ্যাকেট খুলে, মুখের উপরে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
আমি জানিনা আমি ক্যামনে ঘুমিয়েছি।
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেদিন।

ঘন্টাখানেক পর, পাশে একজনের কান্না শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। তাকে জিজ্ঞাসা করি, ভাই আপনাকেও কি তুলে এনেছে?
সে কোন উত্তর দেয় না।

কিছুক্ষণ পড় এক রক্ষী এসে আবার চোখ বন্ধ করে আমাকে নিয়ে যায় আরেক রুমে।
চেয়ারে বসিয়ে, পা বাঁধা হয়, হাত বাঁধা হয়।

আমি বুঝে নিলাম আমাকে টর্চার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হঠাৎ করে লাঠি দিয়ে আমাকে পেঠাতে থাকে, দুই পাশ থেকে। আর বলে, তোর সাথে আর কে কে আছে, নাম বল।
তোর সাথে তোর বাসার সামনে আড্ডা দেয়, চা খায় এরা কারা, নাম বল।
আমি তখন দুইটা ভাইয়ের নাম বলি, যাদের সাথে আমি আড্ডা দিতাম অফিস শেষ করে।

নাম বলার পর ওরা আমাকে ফেসবুক থেকে ছবি বের করে, আমার চোখ খুলে ওদের ছবি দেখায়,এবং জিজ্ঞাসা করে ওরাই তারা কিনা, সাথে ফোন নাম্বার নেয় আমার কাছ থেকে।

আবার চোখ বন্ধ করে আমাকে সেলে নিয়ে আসে।

আমি বলেছিলাম, আমার অনেক ক্ষিধা লেগেছে, তখন আমাকে একটি বন রুটি দিয়ে যায়। আর পানি খেতে বল্লো টয়লেটের কলের পানি থেকে। আমি খেয়ে নিলাম। কারারক্ষীকে অনুরোধ করলাম আমাকে একটা কোরআন দিতে।

সে একটি কোরআন দিয়ে যায়, আমি সারাদিন নামাজ পড়লাম, কান্না করে করে, চিৎকার করে কোরআন পড়তে থাকলাম!
আমাকে এসে হুমকি দিয়ে গেলো যাতে আস্তে পড়ি।

একিই দিন মধ্যরাতে আমাকে আবারো ইন্টারোগেশনে নিয়ে আসা হয়! আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চ্যারিটির কাজ করেছিলাম সেসব নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবার করা হলো।
আমাকে জঙ্গি দলের সাথে সম্পৃক্ততা থাকা স্বীকার করতে বল্লো।
আবারো কিছু নাম বলতে বল্লো। আমি বল্লাম আমি কোন রাজনীতি করিনাই, কোন দল করিনাই।
তাই কোন নাম বলতে আমি পারবো না।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে আবারো ফিরিয়ে আনা হলো সেলে।

পরের দিন!
চোখ, হাত বেঁধে ফেলা হলো। আবারো একটা গাড়িতে তোলা হলো। গাড়ি চলতে লাগলো এক অজানা গন্তব্যে।
এবং এবারো শিওর হয়ে গেলাম আমাকে ক্রস ফায়ার দিতে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি পেছনের সিটে বসে হেলান দিয়ে চোখ বাঁধা অবস্হাই ফাঁক দিয়ে দেখছিলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা।

এক ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামলে আমি পিলার সাইনবোর্ড এ লিখা দেখি
“র্যাব হেডকোয়াটার” বাংলাতে লিখা।

একজন রেব সদস্য বুঝে ফেলে আমি দেখছি সবকিছু, সে সাথে বলে উঠলো, এই এই
ও তো সব দেখছে !!
সাথে পাশে থাকা সদস্য আমার চোখের বাঁধন টাইট করে দেয়। আরে নিচে টিস্যু ঢুকিয়ে দেয়।

তারা আমাকে ধরে সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যায়।
উপরে নিয়ে চোখ আর হাত খুলে দিলে দেখতে পায়, একটা অন্ধকার রুম চারপাশে কালো কাপড়।

মাথা নিচু করে থাকতে বল্লো লাঠি দিয়ে গুঁতো দিয়ে। আর এক প্লেট ভাত এনে দিলো, সাথে এক টুকরো বিস্বাদ মাছ।
বল্লো সব ভাত খাবি, আর খাওয়ার পর হাত ধুয়ে সে পানি গিলবি!!
আমি বল্লাম আমি খেতে পারবো না এই ভাত।
তারা কয়েকবার জোড় করলো, আমি খেতে পারিনাই।
পরে এক গ্লাস পানি খেলাম।
ঐ রুমেই কিছুক্ষণ আমাকে বসিয়ে রেখে, এক সেট কাপড় দিলো, লুঙ্গি আর টি শার্ট।
কাপড় চ্যান্জ করে সেগুলো পড়তে বল্লো।

আমি পড়ে নিলাম। আবার চোখ বেঁধে, হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে একটা অন্ধকার সেলের দরজা খুলে আমাকে ফেলে গেলো।
আর বলে গেলো, যাতে নাড়াচাড়া না করি। কোন আওয়াজ না করি।

আমার হাত পেঁছন থেকে হ্যান্ডকাফ, খুব টাইট করে বাঁধা ছিলো। বল্লাম ভাই আমার হাত কেটে যাচ্ছে। প্লিজ একটু ঢিল দেন।
রক্ষী ঢিল করে দিলো।

এবার আমি শুয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকি।
শুনশান নিরবতার মধ্যে opposite থেকে কে যেনো শশশশ করে আওয়াজ করছে।
আমি আবারো চোখের নিচ দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। করিডোর দিয়ে আসা হালকা আলোতে দেখলাম আমার ঠিক opposite এ একজন হাত নাড়ছেন। আমি উঠে বসলাম এবার। বুঝতে পারলাম আমার মত কোন এক হতভাগা।

এবার সে আমাকে ইশারাতে শিখিয়ে দিলো,
পেছন থেকে হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় কিভাবে হাত সামনে আনতে হয়।
আমি পায়ের নিচ দিয়ে হাত সামনে আনলাম।
সাথে চোখের বাধন টা উপরে উঠালাম।

তিনি এও বলে দিলেন, সে কাশি দিলেই যাতে আবার আগের মত চোখের বাধন বন্ধ করে দিয়। হাত পেছনে নিয়ে।

কারণ ওরা যদি বুঝতে পারে আমি চোখ খুলেছি, তাহলে প্রচুর মারবে।

আস্তে আস্তে দেখতে পেলাম আমার অপজিটে চারটা সেলে চার জন। আর আমার দুই পাশে আছে দুইজন, কিন্তু তাদের আমি দেখতে পাইনি।

Opposite এর সে ভাই আমাকে মেন্টাল সাপোর্ট দেয়া শুরু করলেন। তিনি আমাকে শান্ত হতে বলেন, ধৈর্য ধরার নসিহা করেন।
আর বলেন সবকিছু ভুলে এক আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে। আল্লাহ তায়ালাই সেইভ করবেন। তিনি এই সব কিছুই ইশারা আর ফিশ ফিশ করে মুখ নেড়ে আমাকে বলতে থাকেন। অনেক সময় অনেক কথা বুঝতাম না। তখন দেয়ালে হাতের ইশারায় লিখে বুঝাতে চেষ্টা করেন। কিছু বুঝতাম, কিছু বুঝতাম না।

এক ভাই কে কাতার থেকে আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে তুলে আনা হয়।
আরেক ভাই বয়স ১৭-১৮ বছর মাত্র, তাকেও চট্টগ্রাম থেকে তুলে এনে সেখানে রাখা হয়।
১৭ -১৮ বছরের ছেলেটা এত শান্ত, এত নিরীহ। ওল্টা সে আমাকে মুরুব্বির মত শান্তনা দিচ্ছিলো, যখন আমাকে দেখতো আমি হতাশ হয়ে পড়ছি। কান্না করছি।

পাশের আরো দুইজন ভাই ,একজন ভোলা থেকে।
অন্যজনদের গুলো খেয়াল নেই।

আরেকজন ছিলো, যে হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার করে উঠতো, ভয়ঙ্কর চেহেরার কিছু রক্ষী তাকে গরুর মত পেটাতো। পিটা খেয়ে সে ভয়ঙ্কর করুণ সূরে কান্না করতো।

ওরে চলে যাওয়ার পর
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন তাকে মারে।
এক ভাই বল্লেন মার খেতে খেতে সে পাগল হয়ে গেছে, এবং ল্যাংটা থাকে। তাই মারে।

আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম তারা এইখানে কত দিন ধরে। কেও বলে তিন বছর, কেও বলে দুই বছর, জিজ্ঞাসা করলাম মিনিমাম কতদিন রাখে এইখানে।
তারা বল্লো এক, দুই বছর!!

আমি সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে বিশ্বাস করে নিলাম আমি আর হইতো বের হতে পারবো না।
আমার বাবা মা, আত্মীয়স্বজন কখনো জানবে না আমি মরে গেছি নাকি বেচে আছি।
আমার ছোট দুই সন্তাকে খুব মনে পড়তে থাকে। আমার মা বাবা আর স্ত্রীর কান্নামাখা মুখ বার বার মনে পড়ছিলো।

আমি জিকির করতে থাকি, নামাজ পড়তে থাকি!আর মাঝে সুযোগ পেলে অন্য বন্ধিদের সাথে কথা বলতে থাকি! এভাবেই এদিনটি কেটে যায়।

বাই দ্যা ওয়ে সেলের একটু বর্ননা দিচ্ছি।
আপনারা যে আইনাঘর নামের ঘরগুলো দেখছেন, তার চাইতেও নোংরা অন্ধকার সেল ছিলো সেগুলো। সূর্যের আলোও আসতো না।
সবসময় রাত হয়ে থাকতো। আজান হলে
রক্ষীরা এসে বলে যেতো কোন ওয়াক্তের নামাজ।

ওযু টয়লেট গোসল করার জন্য পাঁচ মিনিট টাইম নির্দিষ্ট করা থাকতো। তারা এসে হাত ধরে টয়লেট করতে নিয়ে যেতো, আবারো টয়লেট শেষ হলে তারা ধরে এনে সেলে ঢুকিয়ে দিতো।
এমনকি টয়লেটের দরজা পুরো বন্ধ করা যেতো না। তারা দেখে থাকতো কি করছি।

পরের দিন সকালে আমাকে সেল থেকে বের করে আরেকটা রুমে নিয়ে ইন্টারোগেশন শুরু করলো। এবার তিন চারজন ইন্টারোগেইট করলো ভিন্ন ভিন্ন কন্ঠ তাই মনে হলো।

সেইম প্রশ্ন, আমিও সেইম উত্তর দিয়।
তারা বিরক্ত হয়ে আমাকে পেটাতে থাকে।
আমি কান্না করে বল্লাম ভাই আমি কি বানিয়ে বানিয়ে বলবো।

আমাকে পাশ থেকে ফিস ফিস করে একজন বল্লো তোকে এইবার আরো কঠিন শাস্তি দেবো, কিছু নাম বল। ছেড়ে দেবো।
আমি বলি, আমি কাওকেই চিনিনা।
শেষে আমার ফেসবুক ম্যাসেন্জারের আইডি ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করছিলো। তারা হতাশ হলো কোন সন্তুষ্টজনক উত্তর না পেয়ে।

ওরা কোন উত্তর না পেয়ে আমাকে আবারো সেই অন্ধকার সেল /আইনাঘরে নিয়ে এলো।

অতঃপর এভাবেই কেটে যায় দিন রাত, ইন্টারোগেশন, আবারো সেলে।
আমাদের ভাত দেয়া হতো, যেগুলো ছিলো বিস্বাধ, খাওয়ার পরে হাতে ধূয়ে প্লেটের পানিগুলো খেতে হতো!! প্লেট পরিস্কার করেই ফেরত দিতে হতো। সকালে নাস্তাগুলোও ছিলো নিকৃষ্ট।

এরপর সাত আটদিন পর একদিন একজন রক্ষী এসে আমাকে, আমার কাপড়চোপড় দিয়ে বলে, এগুলো পড়ে নে।
আমি বুঝলাম এইবার আর রক্ষা নাই।
ক্রসফায়ার দিয়েই দিবে।
কালেমা দোয়া পড়ে নিলাম। স্মরণ করলাম আমার পরিবার কে। তাদের জন্য দোয়া করলাম।

হঠাৎ আমাকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়াতে ভাইদের আর বিদায় জানাতে পারলাম না।

গাড়িতে তোলা হলো, আবার গাড়ি চলতে লাগলো। এক ঘন্টা পর গাড়ি থেকে নামানো হলো। আবারো সেই প্রথমদিনের সেলে ঢুকানো হলো।
তখনো পর্যন্ত বুঝতে পারিনি সেই সেলটি কোন জায়গায়।

দেখলাম যে দুই ভাইয়ের নাম ওরা জিজ্ঞাসা করেছিলো সে জুনিয়র দুইটা ভাইকেও ওরা তুলে এনেছে। ওরাও ছিলো অন্য আইনাঘরে!!
আমাকে একবারের জন্যও বুঝতে দেয়নি, ওরা আমার এই দুই ভাইকেও ধরেছে।
এক ভাইকে পাশের সেলেই রাখলো। আরেক ভাইকে অন্য সেলে! নিজেকে তখন ক্রিমিনাল মনে হতে থাকলো। অনুশুচনা করতে লাগলাম কেন তাদের নাম বল্লাম। আমার জন্য তাদের জীবনটাও গেলো।

ঐদিন রাতেই আমরা তিনজন সাথে আমাদেরও আগে তুলে আনা এক মাদ্রাসার ভাইকে , গাড়িতে তোলা হলো।

এত রাতে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা সবাই গাবড়ে গেলাম।
কিন্তু আবার আমার নিজের মনে হতে লাগলো আমাদের মে বি ছেড়ে দেবে।

গাড়ি চলতে চলতে কিছুক্ষণ পর থামলো, আমি চোখ বাঁধা অবস্হাতেই ফাঁক দিয়ে দেখলাম দেখলাম একটা হোটেলের সামনে, গাড়িটা দাড়িয়েছে। গাড়িটার দরজা খুলে এক সদস্য নামলো। সে দেখলাম হঠাৎ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“এই জঙ্গি ধর, জঙ্গি ধর “এই ধর ধর ”

আমি আরো আতঙ্কিত হয়ে গেলাম, মনে করলাম এই গুলি করে দেবে!!

কিন্তু চোখের নিচ দিয়ে দেখতে পেলাম হোটেল থেকে চারটা ছেলেকে ওরা ধরে নিয়ে আসলো। গাড়িতে তুল্লো।

মনে মনে ভাবলাম সত্যি সত্যি জঙ্গি ধরে আমাদের সাথে হয়তো মিশিয়ে দেবে।

গাড়ি দরজা বন্ধ করে দিয়ে, আবারো একিই জায়গাই আসলো। পুরাই ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেলাম। কিন্তু দেখলাম যে যে চারটা ছেলেকে তারা গাড়িতে উঠালো, গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথেই দাড়িয়ে তারা আবার গল্প করছে। হাঁসি ঠাট্টা করছে। বুঝতে পারলাম,
ওরা আসলে সোর্স ছিলো

আমি এবার দেখলাম আশপাশে RAB 11 লিখা কিছু গাড়ি। শিওর হলাম প্রথমে এনে তারা এখানেই রেখেছিলো।
এবং RAB 11 এর কয়েকজন অতি উৎসাইী ব্যাক্তি এই কাজটি আমাদের সাথে করেছে।

((বিশেষ কারণে আমি আমার ভুক্তভুগী ছোট দুই ভাইয়ের নাম বলছিনা। দুঃখিত।))

যায় হোক …
আবারো সেলে ঢোকানো হলো। সবকিছু শান্ত হয়ে আসলে, পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করলাম “ছোট ভাই কাহীনি কি
ছোট ভাই বল্লো “ভাই বুঝলেন না, কেস সাজিয়েছে তারা ”

আমি জাস্ট কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলাম।
এত জঘন্য, জালিম, নিকৃষ্ট RAB এর ঐ ব্যাক্তিগুলো?
এত চোখের পানি ফেল্লাম, তাদের মন গলেনি।
আমার ছোট দুই সন্তানের কথা শুনেও তাদের মন গলেনি। আরো মিথ্যা মামলা সাজানোর নাটক করলো???

যাই হোক ….
পরের দিন আমাদের চারজনকে সকালে বন আর মিস্টি খাওয়াইয়ে। বের করে আনলো বাইরে। এবার চোখ খোলা, কিন্তু হ্যান্ডকাফ পড়ানো।

সামনে দেখলাম সময় টিভিসহ এক ডজন মিডিয়া।
তারা হাটতে বল্লো। দুই পাশে দুই র্য্যাব সদস্য আমাদের হাঁটাতে থাকলো।
হাঁটিয়ে আবারো সেলে ঢোকানো হলো।
আমরা স্তব্ধ হয়ে, নিশ্চুপ থেকে সব দেখে রইলাম। কোন টু শব্দও করলাম না।

সেদিন রাতেই আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগন্জের ফতুল্লা থানায়।
আমি উদ্গ্রিব হয়ে খুঁজছি একটা ফোন।
হঠাৎ পেয়ে গেলাম এক মুরুব্বিকে। তাকে রিকোয়েস্ট করে তার ফোন নিয়ে আমি আমার মাকে কল দিয়ে। ধরে আমার বাবা,
“আমি কান্না করে বলি বাবা আমি মাসরুর ”

আমার বাবা হু হু করে কান্না করতে থাকেন!!
জিজ্ঞাসা করেন আমি কোথায়, আমি বল্লাম ফতুল্লা থানায়।
এক পুলিশ সদস্য এসে ছো মেরে ফোনটি কেড়ে নেয়।
অতঃপর পুরো রাত আমাদের থানার গাড়দে রেখে পরের দিন চালান করে দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলখানায়।

আর আমাদের নামে মামলা হয় এই বলে যে,

“নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার হোটেলের সামনে গোপন বৈঠকে থানায় নাশকতা পরিকল্পনা করার সময় আমাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে RAB 11। তারা প্রমাণ পেয়েছে আমরা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। আমরা রাষ্ট্রদ্রোহী। আমাদের সাথে পেয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি বই। ”

মিথ্যা দিয়ে ভরা, সাংঘর্ষিক বর্ণনার এই মামলা দেখে যে কেও বলে দিতে পারে এটি একটি ভুয়া মামলা।

অতঃপর এই মিথ্যা মামলাতে জামিন ক্যান্সেল হতে হতে জেলখানায় কাটিয়ে দিলাম মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, প্রায় দশ মাস।

দশ দিন ভয়ঙ্কর গুম জীবন, দশ মাসের দুর্বিষহ জেল জীবন এর মুক্তির পর ….
আমি এসে দেখি আমার আট মাসের হামাগুড়ি দেয়া ছেলে ইনতিসার দৌড়াচ্ছে।
আমার মেয়ে ইয়ামিনা বড় হয়ে গেছে।

সে জেল জীবনের গল্প না হয় আরেকদিন বলবো ….

সে মিথ্যা মামলার চার বছর ধরে আজো হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি, চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে।

জানিনা সে মামলা থেকে রেহায় পাবো কিনা,
জানিনা সে মামলাতে রায় হয়ে আবারো জেলে পঁচতে হবে কিনা।

জেল থেকে বের হয় দেড় বছর বেকার ছিলাম। কোন জবও আর করতে পারিনি।
জঙ্গিকে কে আর জব দেবে বলেন?
লোন নিতে নিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।

জেল জীবন আর এর পরবর্তী কয়েকবছরের জীবন ছিলো আরো দুর্বিষহ।

যাই হোক, আপনারা জেনে রাখুন, যা বলেছি, তার প্রতিটি কথায় সত্য। এবং আপনাদের আজ সাক্ষী করলাম।

RAB 11 এর কিছু দূর্নীতিগ্রস্ত ব্যাক্তি প্রমোশনের জন্য, টাকার জন্য, এসব করে বেড়াতো।
বিদেশীদের ওরা খুশি করার জন্য মিথ্যা জঙ্গি নাটক সাজাতো। আর সরকার থেকে ম্যাডেল পেতো!

এই সেইম ব্যাক্তিগুলোই এইরকম শত শত নিরপরাধ মানুষকে গুম করেছে নির্মম টর্চার করেছে। অতঃপর জঙ্গি মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেল খাটিয়েছে।
এদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি নারীরা পর্যন্ত।
ওরা নারীদেরকেও গুম করতো, টর্চার করতো, এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে এ দিতো।

এদের বিচার এই বাংলার জমিনে হতেই হবে।
ইন শা আল্লাহ।
তবেই আমাদের স্বাধীনতার পূর্ণতা পাবে।

Related Images:

Rifat Chowdhury

Filed Under: সংগৃহীত

  • 1
  • 2
  • 3
  • …
  • 22
  • Next Page »

নামাজের সময়সূচী

    ঢাকা, বাংলাদেশ
    রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
    ওয়াক্তসময়
    ফজর4:00 AM
    সূর্যোদয়5:11 AM
    জোহর11:59 AM
    আসর4:39 PM
    মাগরিব6:46 PM
    ইশা7:58 PM

বিভাগসমূহ

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • এই ৯ মিনিট আপনার সন্তানের জন্য ভীষণ প্রয়োজন
  • আবোল তাবোল রাজনীতি – পার্ট ২
  • সংখ্যা অনুপাতিক নির্বাচন ও এর সুফল
  • আমার আয়না ঘর দর্শন
  • কি দেখে পুরাতন/ব্যবহৃত ল্যাপটপ কিনব?
  • আবোল তাবোল রাজনীতি
  • ফলো টু ফলো – Follow to Follow
  • বি.ডি.এস. পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন।
  • আমি আজও বুঝলাম না আমার ডিভোর্সের আসল কারণ কি?
  • কিছু নির্মম ইতিহাস – Tasrif Khan
  • কেউ সুখে না রাখলে কি সুখি হওয়া যায়?
  • Sarjis Alam ভাইয়ের ২০২১ সালের পোস্ট
  • আমার গুমের গল্প।ভিক্টিম: মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী!
  • পাপের নগদ শাস্তি
  • যে ভালোবাসে তাকেই পাশে রাখ।
  • ছাদবাগান থেকেই আসবে প্রয়োজনীয় সবজি
  • A গ্রেড অথবা B গ্রেড টাইলস চেনার উপায় কি?
  • আমাদের ছেলেরা কীভাবে পুরুষ হবে?
  • প্রচন্ড গরমে বিল্ডিং বা পাকা বাড়িতে AC ছাড়াই ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে একটি পরামর্শ
  • এসি-ফ্যান একসাথে চালালে ঘর ঠান্ডা হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ বাঁচে?

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

  • ❌ লজ্জা নয়, বাঁচতে হলে জানতে হবে। ? এম এম কিট MM Kit প্রকাশনায় সুমাইয়া
  • অনলাইনে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশনায় মোঃ শরিফুল ইসলাম
  • ❌ লজ্জা নয়, বাঁচতে হলে জানতে হবে। ? এম এম কিট MM Kit প্রকাশনায় পান্না দাশ
  • কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিষয়ক জিজ্ঞাসা প্রকাশনায় HAFEZ
  • কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিষয়ক জিজ্ঞাসা প্রকাশনায় HAFEZ

অনুসন্ধান করুন

বিভাগসমূহ

স্বাস্থ্য টিপস

আসুন আমরা আমাদের কড়াইটা বড় করি।

এক লোক নদীতে মাছ ধরছিল। তার বড়শি ছোট মাছ ধরা পড়লে সেটা সে রেখে দেয়, আর বড় মাছ ধরা পড়লে সেটাকে আবার নদীতে ছেড়ে দেয়। পাশের এক লোক কিছু সময় তার এই অদ্ভুত কাজ দেখার পর জানতে চাইলো, ভাই আপনি এটা কেন করছেন। তখন সে বলল ভাই আমার মাছ ভাজার কড়াইটা ছোট, তাতে বড় মাছ ভাজা যায় না। আমাদের অনেকের কাছেই এমন ছোট কড়াই আছে […]

Copyright © 2025